অনলাইন ডেক্স:
দেশের রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিপুলসংখ্যক অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক। মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণহীন এসব যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের প্রধান সড়ক থেকে এসব বাহন কয়েক দফা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেও আন্দোলনের মুখে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারগুলোর জন্য কোনো আইন, নীতিমালা বা বিধি-বিধানও নেই। কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয়, সারাদেশে ৫০ লাখেরও বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায়ই রয়েছে প্রায় ৮ লাখ। দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিকল্প কর্মসংস্থান না করে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ না করার জন্য দাবি রয়েছে। বাহনগুলোর একটি নীতিমালার আওতায় এনে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই আলোচনায় থাকলেও কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২৫’র খসড়া করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় আছে বলে জানিয়েছেন মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। নীতিমালার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, স্বল্প নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসম্পন্ন, ধীরগতির বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার দ্রুতগতিসম্পন্ন মোটরযানের সঙ্গে একই মহাসড়কে চলাচলের সময় গতির পার্থক্যের কারণে প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে সড়কের ধারণক্ষমতার তুলনায় বেশি সংখ্যক বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চলাচল করায় অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, যা ভ্রমণ সময় ও বিদ্যুতের অপচয় বাড়াচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ হওয়ার পরও এসব যান বর্তমানে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। কারও কাছে আবার জীবন-জীবিকার অংশ। পাশাপাশি সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী। পণ্য ও যাত্রী পরিবহন এবং বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জিডিপিতেও অবদান রাখছে। ফলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যাতায়াতের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সময় এসেছে নিরাপদ যান হিসেবে তৈরি করে মহাসড়ক ছাড়া অন্য সড়কে চালানোর। জনগণের চাহিদা ও সড়কের ধারণক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চলাচলের অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে জনগণের জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ নীতিমালা প্রণয়ন বাস্তবায়নের করার পথে হাটছেন। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মধ্যমগতির বৈদ্যুতিক অটোরিকশা, মোটরক্যাব রিকশা ও অটোটেম্পো এবং থ্রি-হুইল ভ্যান সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। ধীরগতিসম্পন্ন বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। এজাতীয় মোটরযানের ইকোনমিক লাইফ ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এবং ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২৩’ অনুযায়ী সরকার নির্ধারণ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।বিদ্যমান আইন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করে অটোরিকশা মোটরযান চলাচল করবে এবং এর কোনো ধরনের ব্যত্যয় হলে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-এ বর্ণিত অপরাধের ধরন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে খসড়া নীতিমালায় জানানো হয়েছে। চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির পরামর্শে বিআরটিএ জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। এজাতীয় মোটরযানের অভ্যন্তরে যাত্রীর দৃশ্যমান স্থানে মোটরযানের মালিক ও চালকের মোবাইল ফোন নম্বর প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।